কৃষিকাজের প্রচলনে ও স্থায়ীভাবে বসবাসের সূত্রপাত, ধাতু হিসেবে ব্রোঞ্জের ব্যবহার, সমুদ্র ও স্থলপথে বাণিজ্যের বিস্তার, লিখন শৈলীর আবিষ্কার এবং সমাজ ও পেশাগত ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণিভেদ, সরাসরি উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন একটি শাসক-পুরোহিত-কেরানি শ্রেণির উদ্ভব মিলিয়ে মানুষ বিভিন্ন স্থানে সুপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, স্থাপত্য, প্রাসান, ধর্মীয় স্থাপত্য, সাধারণ মানুষের বসবাসের আলাদা এলাকাসহ নগর তৈরি করে। অনেক ক্ষেত্রেই এই নগরগুলো এক একটি রাষ্ট্র ছিল। নগরের বিকাশের মাধ্যমে সমাজ-ধর্ম-শাসন-অর্থনীতিতে যে বড় বদল এলো, তাকেই নগরায়ণ বলা হয়ে থাকে। এই নগরাক্ষণ ছিল মানুষের ইতিহাসে প্রথম সভ্যতা গড়ে তোলার একটি লক্ষণ
সভ্যতার বিকাশকে সরলভাবে মানুষের উন্নতি হিসেবে বিবেচনা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই সভ্যতার ভালো দিকের পাশাপাশি মন্দ দিকও ছিল। মানুষ প্রযুক্তিগত উন্নতি করছে, নতুন নতুন জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চা করছে, সাহিত্য সৃষ্টি করছে, জ্যোর্তিবিজ্ঞানের বিকাশ ঘটছে। এগুলো ভালো দিক। মন্দ দিকগুলো হলো মানুষে মানুষের মধ্যে শ্রেণিবিভেদ বেড়েছে, হানাহানি বেড়েছে, বিরাট পরিসরে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধ হচ্ছে, প্রতিযোগিতা বেড়েছে, শাসকশ্রেণি হিসেবে একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে। মানুষকে ফণী করে দাস হিসেবে অত্যাচার করা হচ্ছে। দাসদের দিয়ে সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজগুলো করানো হচ্ছে।
চলো, আমরা সভ্যতার আরও কিছু ভালো ও মন্দ দিক খুঁজে বের করি :
আমরা এরপর সভ্যতা সম্পর্কে যতই জানব, পাশাপাশি এর ভালো ও মন্দ দিক নিয়ে চিন্তা করব আর এই
সভ্যতার ভালো দিক | সভ্যতার মন্দ দিক | |
---|---|---|
১ ২ ৩ ৪ |
তালিকায় যোগ করব।
বেশির ভাগে প্রথম দিককার সভ্যতাই গড়ে উঠেছিল নদীবিধৌত উর্বর সমতলভূমিতে। এই নদী অববাহিকাগুলো কৃষিকাজের জন্য উপযুক্ত ছিল। নদীপথে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের সুবিধা দিয়েছিল। প্রতিটি সভ্যতার এই বিশেষ ভূগোল-নির্ভরতা কিন্তু তোমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা এই অধ্যায়ে সবগুলো সভ্যতা নিয়ে আলাপ করতে পারবো না। আফ্রিকা মহাদেশে বিকশিত মিসরীয় সভ্যতা, এশিয়া মহাদেশে বিকশিত মেসোপটেমীয় সভ্যতা আর ইউরোপে তুলনামূলকভাবে অনেক পরে বিকশিত গ্রিক ও রোমান সভ্যতার কয়েকটি বৈশিষ্টা নিয়েই তোমরা জানতে পারবে। বড় হয়ে এসব সভ্যতা, সেই সময়ের সমাজ, রাজনীতি, মানুষের জীবনযাপন নিয়ে অনেক বেশি জানতে পারবে।
তোমরা তো বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সম্পর্কে জানতে পেরেছ যা পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রাকৃতিক গঠন। সেখানে আছে পাহাড়ের মতো কিছু আকর্ষণীয় ভূমিরূপ । আবার কিছু ভূমিরূপ আছে যা সমান বলে মনে হয় মানে খুব বেশি উঁচু নয় (৩০০ মিটারের বেশি নয়)। আসলে সেই সব ভূমিরূপকে সমতল ভূমি বা সমভূমি বলা হয়। সমতল ভূমি সাধারণত বিশাল এলাকা যা বেশির ভাগ সমতল।
চলো জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সমতল ভূমি গঠিত হয়। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীতে প্রথম সমভূমি আগ্নেয়গিরির লাভা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। লাভা পৃথিবীর উপরিভাগে ধাক্কা খেয়ে কিছু এলাকাকে সমতল করে তুলেছিল।
কিছু সমভূমি ক্ষয় দ্বারা গঠিত হয়েছে। যখন বাতাস, বরফ বা পানি ভূমির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় ভূমির কিছু অংশ ধুয়ে যায়। আবার ভাঙন প্রক্রিয়া পাহাড়ি জমিকে সমতল ভূমিতে পরিণত করতে পারে।
তোমরা তো আলাদাভাবে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক কাঠামো বা ভৌগোলিক অবস্থান, যেমন- নদী, মরুভূমি, বদ্বীপ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছ। এগুলোর চমৎকার অভিধানও তৈরি করেছ। এবারে এই যে বিভিন্ন সভ্যতার ইতিহাস আমরা জানব, সেখান থেকে প্রতিটি সভ্যতার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে বের করবো। সেগুলো সভ্যতার বিকাশে বা বিলুপ্ত হওয়া বা অন্য কীভাবে প্রভাব ফেলেছে তা আমরা খুঁজে বের করবো : |
সভ্যতার নাম :……………………………………………………
যে প্রাকৃতিক কাঠামো বা কাঠামোগুলো প্রভাব ফেলেছে তার নাম:……………………………………….
কীভাবে প্রভাব ফেলেছে:………………………………………………………………………………
প্রাকৃতিক কাঠামো কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, কল্পনা করে তার ছবি আঁকি
|
সভ্যতার নাম :……………………………………………………
যে প্রাকৃতিক কাঠামো বা কাঠামোগুলো প্রভাব ফেলেছে তার নাম:……………………………………….
কীভাবে প্রভাব ফেলেছে:………………………………………………………………………………
প্রাকৃতিক কাঠামো কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, কল্পনা করে তার ছবি আঁকি
|
সভ্যতার নাম :……………………………………………………
যে প্রাকৃতিক কাঠামো বা কাঠামোগুলো প্রভাব ফেলেছে তার নাম:……………………………………….
কীভাবে প্রভাব ফেলেছে:………………………………………………………………………………
প্রাকৃতিক কাঠামো কীভাবে প্রভাব ফেলেছে, কল্পনা করে তার ছবি আঁকি
|
একই সভ্যতার ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক কাঠামোর প্রভাব থাকতে পারে। প্রয়োজন বোধে খাতায় বাকি কাজগুলো করতে পারো।
মিসরীয় সভ্যতাঃ নীল নদের দান
পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম একটি প্রাচীন সভ্যতার নাম মিসরীয় সভ্যতা। সভ্যতাটি নানা দিক থেকেই বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসে তার স্বকীয়তার পরিচয় দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। উর্বর ভূমির কারণে মিসরে নব্যপ্রস্তর সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রত্নস্থানও পাওয়া যায়। যেমন- মেরিমনে, বাদারি, ফাইয়ূম প্রভৃতি মিসরের নব্যপ্রস্তর সংস্কৃতির অন্যতম প্রত্নস্থান।
মিসরীয় সভ্যতার লিপি ছিল চিত্রলিপি। এই লিপি এই সভ্যতার বিভিন্ন স্থাপত্যে যেমন পাওয়া যায়, তেমনই পাওয়া যায় পাথরে আর সেই সময়ে তৈরি করা প্রথম কাগজে। এই কাগজের নাম ছিল প্যাপিরাস। এই লিপির নাম হায়ারোগ্লিফিক। অনেক পরে আবিষ্কৃত রোজেটা পাথরে হায্যরোগ্লিফিকসহ মোট তিনটি ভাষায় কিছু বিষয় লিখিত অবস্থায় পাওয়া যাওয়ায় এই লিপি পড়া সম্ভব হয়েছিল। হায়ারোগ্লিফিক শব্দের সাধারণ অর্থ হলো 'পবিত্র লিপি'। এগুলো ছিল মূলত চিত্রলিপি। মিসরীয়রা এই ধরনের সর্বমোট ৭৫০টি চিত্রলিপির ব্যবহার জানতো। বিভিন্ন স্থান থেকেই প্রচুর পরিমাণে হায়ারোগ্রিফিক লিপিতে লেখা তথ্য পাওয়া যাওয়ায় মিসরীয় সভ্যতার সমাজ, রাষ্ট্র, শাসন, ও ধর্ম সম্পর্কে অনেক কিছু জানা সম্ভব হয়েছে।
অবস্থান ও সময়কাল:
মিসরীয় সভ্যতা আফ্রিকা মহাদেশের মিসরে নীল দ অববাহিকায় বিকশিত হয়েছিল। এর দক্ষিণে নুবিয়ার মরুভূমি, পূর্বে লোহিত সাগর, পশ্চিমে লিবিয়ার সাহারা মরুভূমি এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগর রয়েছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম নদী নীল নদটি আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া থেকে উৎপত্তি লাভ করে নানা দেশ হয়ে মিসরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে পতিত হয়েছে। এর প্রবাহের ওপর ভিত্তি করে মিসরের দক্ষিণাঞ্চলকে উচ্চ মিসর ও উত্তরাঞ্চলকে নিম্ন মিসর বলা হয়ে থাকে। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে মিসরীয়দের ধর্ম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও নীল নদের প্রভাব ছিল। এর সত্যতা অনুধাবন করে ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস বলেছেন, 'যে ব্যক্তি মিসর দেখেছেন, সে অবশ্যই উপলব্ধি করেছেন যে, এটি একটি স্বোপার্জিত দেশ, নীল নদের দান।' মিসরের প্রাণ নীল নদের কারণে মানবসভ্যতার ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা সমৃদ্ধিশালী দীর্ঘস্থায়ী সভ্যতার সুচনা হয়েছিল।
সময়কাল:
মিসরীয় সভ্যতা আনু: ৩১৫০ প্রাক সাধারণ অব্দ থেকে আনুঃ ৩০ প্রাক সাধারণ অম্ল পর্যন্ত ৩০০০ বছরেরও বেশি সময়ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল।
নদী ও বদ্বীপ নদী সাধারণত মিষ্টি জলের একটি প্রাকৃতিক জলধারা যা করনাধারা, বরফগলিত স্রোত যা প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়ে প্রবাহ শেষে সাগর, মহাসাগর, হ্রদ বা অন্য কোন নদী বা জলাশয়ে পতিত হয়। যদিও নদীগুলি পৃথিবীর মোট জলভাগের একটি ক্ষুদ্র অংশ ধারণ করে, তবুও তারা মানব সভ্যতার জন্য সর্বদা অপরিহার্য। নদীগুলি সারা পৃথিবীজুড়ে মানুষ, গাছপালা এবং প্রাণীদের কাছে মিষ্টি পানির এক উৎস হিসেবে কাজ করে। তারা উপত্যকা এবং গিরিখাত খোদাই করে ভূমিকে আকার দেয়। নদীগুলো কীভাবে প্রবাহিত হয় একটি নদী উঁচু ভূমিতে পানির একটি ছোট ধারা হিসেব শুরু হয়। এ পানি বৃষ্টিপাত থেকে, তুষার বা বরফ গলে, অথবা একটি করনার মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে আসতে পারে। উঁচু ভূমির গতিপথে নদী দ্রুত প্রবাহিত হয়। এটি জমি কেটে মাটি ও নুড়ি তুলে নেয়। হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ বছর ধরে, নদী এভাবে গিরিখাত এবং গভীর উপত্যকা তৈরি করে। গ্রান্ড ক্যানিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো মালভূমি নদী দ্বারা গঠিত এবং একটি নদী পৃথিবীরপৃষ্ঠে কী ধরনের পরিবর্তন করতে পারে তা দেখায় আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের নিচে জািেজর বিশাল গিরিখাত। মাঝপথে নদীটি মৃদু ডাল বেয়ে প্রবাহিত হয়। এটা তখন বড় এবং ধীর গতির হয়। তখন মাটি, নুড়ি এবং বালির নিচে তলিয়ে যেতে শুরু করে। এই উপাদানের কিছু অংশ দ্বীপ গঠন করে। সবশেষে নিম্ন গতিপথে নদী আরও ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। তখন আরও কঠিন উপাদানগুলো তলানিতে চলে যেতে শুরু করে এবং কিছু কিছু উপাদান নদীর মুখের দিকে বাহিত হয় যেখানে নদী সমুদ্রে প্রবেশ করে। এই উপাদানগুলোই একত্রিত হয়ে একসময় বদ্বীপ নামক ভূমি তৈরি করে। তোমরা কি জানো আমাদের বাংলাদেশ ও এমনই একটা বদ্বীপ? |
এই বই-এ বিভিন্ন মানচিত্র দেওয়া আছে। চলো আমরা নিজে নিজে আফ্রিকা মহাদেশের একটি বড় মানচিত্র এঁকে তার উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমে কী কী আছে তা মানচিত্রে চিহ্নিত করি। এরপর দুটি ভিন্ন রং দিয়ে উচ্চ আর নিম্ন মিশরকে আলাদা করি:- |
---|
|
সমাজব্যবস্থাঃ
প্রাচীন মিসরের সমাজব্যবস্থায় তিনটি শ্রেণির অস্তিত্ব ছিল। এগুলো হলো-
উচ্চশ্রেণি: এই শ্রেণিভুক্ত ছিল রাজপরিবার, অভিজাত গোষ্ঠী, পুরোহিত গোষ্ঠী প্রভৃতি।
মধ্যশ্রেণি: এই শ্রেণিভুক্ত ছিল বণিক ও কারিগর গোষ্ঠীর মানুষ।
নিম্নশ্রেণিঃ মূলত কৃষক ও ভূমিদাসেরা এই শ্রেণিভুক্ত ছিল।
নারীর অবস্থান: প্রাচীন মিসরের সমাজে নারীরা উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। সমাজের প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রেই তারা পুরুষদের সমপর্যায়ভুক্ত ছিল। মাতৃতান্ত্রিক নিয়মে ছেলে ও মেয়েরা মায়ের কাছ থেকেই মূলত উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি লাভ করতো। রাজপরিবারের রক্ত যাতে বাইরে না যায় তার জন্য ভ্রাতা-ভগ্নির মধ্যে বিবাহের রীতি চালু ছিল।
মিসরীয়দের শাসকের উপাধি ছিল ফারাও। তারা নিজেদের সূর্যদেবতা 'রা' বা 'আমন রে"-এর সন্তান মনে করতেন এবং তিনি তার (অর্থাৎ ঈশ্বরের) প্রতিনিধি হিসেবে রাজ্য শাসন করতেন। প্রাক-রাজবংশীয় যুগে মিশরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন নগর রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছিল। তবে আনু: ৩৫০০ প্রাক- সাধারণ অব্দে মিসরীয়রা যে যায় নার্মার প্লেটে, যেটি রাজা নার্সারের প্রসাধনী রাখার পাত্র ছিল। এর এক পাশে রাজা মেনেস বা নামারকে বেলুন আকৃতির মুকুট পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়; যেটি উচ্চ মিসরের প্রতীক। আর প্লেটের অপর পাশে তাকে লাল মুকুট পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়, যেটি নিম্ন মিসরের প্রতীক। তিনিই প্রথম দুটো মিসরকে একত্রিত করেন, যার রাজধানী ছিল উচ্চ মিসরের মেম্ফিসে। প্রাচীন মিসরে ৩১টি রাজবংশ প্রায় ৩০০০ বছর ধরে রাজত্ব করেন।
মন্দির ও ভাস্কর্য :
প্রাচীন মিসরীয় সভ্যতায় পরের দিকে পিরামিডের বদলে বহু ধর্ম মন্দির তৈরি হয়। এগুলোর মধ্যে বিখ্যাত ছিল কার্নাক ও লাকজোরের মন্দির। মিসরের অপর উল্লেখযোগ্য শিল্প-নিদর্শন হলো আবুসিফেল-এর মন্দির এবং বিশালাকার ‘স্ফিংস'-এর মূর্তি। এ ছাড়াও এগুলোতে বিশালাকার ভাস্কর্যের সমন্বয় ঘটেছে।
অর্থনীতি:
কৃষি, পশুপালন ও শিল্প-বাণিজ্যের ওপর মিসরের অর্থনীতি নির্ভরশীল ছিল। নীলনদের উভয় তীরের উর্বর ভূমিতে কৃষিকাজ হতো। এসময় গম, যব, ভিসি, ভুট্টা, শাকসবজি ও শণ প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হতো। তাদের প্রধান প্রধান গৃহপালিত পশু ছিল ছাগল, ভেড়া, গরু, শূকর প্রভৃতি। নীল নদের উভয় তীরের তৃণভূমি অঞ্চলে পশুচারণ ও পশুখাদ্যের সুবিধা মিলেছিল। প্রাচীন মিসরে মৃৎশিল্প, কোচ শিল্প, বস্তুবয়ন শিল্প এবং নৌযান তৈরির শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। ইজিয়ান দ্বীপ, ক্রিট ছাড়াও সিরিয়া, ফিনিসিয়া, ফিলিস্তিন প্রভৃতি দেশের সঙ্গে মিসরবাসী বাণিজ্য চালাতো। বাণিজ্যের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে তারা তামা ও সোনার মুদ্রা ব্যবহার করতো। তাদের রপ্তানি দ্রব্যের মধ্যে প্রধান ছিল গম, লিনেন কাপড়, স্বর্ণালংকার, সুন্দর সুন্দর মৃৎপাত্র প্রভৃতি। আমদানি দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল উটপাখির পালক, হাতির দাঁত, ধাতুর অস্ত্র, মসলা, কাঠ, সোনা, রুপা প্রভৃতি।
ধর্ম:
মিসরীয়দের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মের প্রভাব ছিল অপরিসীম। স্বল্প সময়ের জন্য 'একেশ্বরবাদে এ বিশ্বাস করলেও তারা ছিলেন মূলত 'বহুঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী। মিসরীয়দের প্রধান দেবতা ছিল 'রা" বা "আমন রে'। নীল নদের দেবতা ওসিরিস, মাতৃত্বের দেবী আইসিস প্রভৃতি ছাড়াও অনেক দেব-দেবী রয়েছেন। প্রাচীন মিশরীয়দের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যগ্রন্থ ছিল 'মৃতের বই' (Book of the Dead)। সমাহিত মৃতদেহের পাশে প্যাপিরাসে লেখা এই ধরনের সাহিত্য নিদর্শন মিলেছে। এই পুস্তকগুলোতে জাদুবিদ্যা, ধর্মীয় শ্লোক ও প্রার্থনা, ঔষধপত্র প্রভৃতির আলোচনা থাকতো।
বর্ষপঞ্জি
প্রাচীন মিসরবাসী কৃষির প্রয়োজনে প্রথমে চন্দ্রের অবস্থানের ভিত্তিতে চন্দ্রপঞ্জিকার উদ্ভাবন ও পরবর্তীকালে সৌরপঞ্জিকার ব আবিষ্কার ঘণ্টায়।
পিরামিড ও মমি:
প্রাচীন মিসরের অন্যতম স্থাপত্যকীর্তি হলো পিরামিড।
পোশাক-পরিচ্ছদ তৈরি, পরিধান ও ভূমিকাভিনয় : ছবিতে প্রাচীন মিসরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের পোশাক-আশাক লক্ষ করো। তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করো (এখান থেকে পড়ে বা অন্য বই পড়ে অথবা ইন্টারনেট ঘেঁটে)। এবারে কাপড়, কাগজ, রং ইত্যাদি ব্যবহার করে প্রাচীন মিসরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের পোশাক, অলংকার ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করে সেগুলো পরে সে সময়কার কোনো কল্পিত ঘটনার অভিনয় করো। এমন একটি ঘটনা তৈরি করবে যেন তা সব শ্রেণির মানুষের জীবনকে প্রতিফলিত করে। |
ফারাও জোসের সময়ে স্থাপত্যশিল্পী ইমহাটেপ সর্বপ্রথম জোনের সমাধিস্থলের ওপর মিসরের পিরামিডটি তৈরি করেন। মিসরের সর্ববৃহৎ পিরামিডটি হলো খুফুর পিরামিড। অন্যান্য কয়েকটি বিখ্যাত পিরামিড হলো নেফরা পিরামিড, মেনকুরা পিরামিড, তুতেনখামেনের পিরামিড ইত্যাদি। মিসরের অক্ষত মমিগুলো আধুনিক বিজ্ঞানীদের প্রতি একটি বিস্ময়কর চ্যালেঞ্জ স্বরূপ। এগুলো তৈরির অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে তারা শারীরবিদ্যার জ্ঞান লাভ করেছিল। ফারাওদেরসহ নানা উচ্চশ্রেণির মানুষের শরীর মমি করে বিশেষ পদ্ধতি সংরক্ষণ করে রাখা হতো। এমন কয়েকটি মমি সংরক্ষণ করাসহ ফারাওদের মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে জীবিত অবস্থার সুযোগ- সুবিধা পাওয়ার বিশ্বাস থেকেই পিরামিড নির্মাণ করা হয়েছিল। পিরামিডে মনির পাশাপাশি আরও নানা ধরনের বস্তু, দেয়াল চিত্র আর ব্যবহার্য জিনিসপত্র উৎসর্গ করা হতো।
বিজ্ঞান:
প্রাচীন মিসরে গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অগ্রগতি ঘটেছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মিসরীয়দের গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো 'মেটেরিয়া মেডিকা' (Materia Medica)' বা ওষুধের সূচি প্রস্তুতকরণ।
মমি তৈরির পদ্ধতিটি ছবিতে দেওয়া আছে। ছবিগুলো চলো আমরা এই প্রক্রিয়ায় ধাপগুলো দেখার চেষ্টা করি। |
যদি আমি কখনো মিসর ভ্রমণে যাই:
তোমরা কি কেউ কখনো মিশরে গিয়েছ? কী কী দেখেছ আর কী কী তোমার ভালো লেগেছে এবং কেন তা বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা কর।
যদি ভবিষ্যতে তোমার কখনো মিসর ভ্রমণের সুযোগ হয়, তাহলে তুমি কোন কোন জায়গায় যেতে চাও? কী কী স্থান পরিদর্শন করতে চাও? কী কী নিদর্শন দেখতে চাও? একটি ইচ্ছার তালিকা তৈরি করে ফেলো তাহলে:
আমি যে শহরগুলোতে যেতে চাই | আমি যে বিশেষ স্থানগুলো পরিদর্শন করতে চাই | আমি যে নিদর্শনগুলো দেখতে চাই | আমি যে কাজ গুলো করতে চাই |
---|---|---|---|
থিবস | সিম্বাল মন্দির | মমি | নীল নদে নৌকা বা জাহাজে ভ্রমণ |
কারণ | কারণ | কারণ এটি তৈরির প্রক্রিয়াটি আমার কাছে চমকপ্রদ লেগেছে। | কারণ |
তোমার ইচ্ছাগুলো পাশের বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে পারো।
মেসোপটেমীয় সভ্যতা: কয়েকটি সভ্যতার যোগফল
‘মেসোপোটেমিয়া' একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ 'দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি'। মধ্যপ্রাচ্যের টাইগ্রিস (দজলা) ও ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদী দুটির মধ্যবর্তী অঞ্চলে পৃথিবীর কয়েকটি অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। সুমেরীয়, ব্যবিলনীয়, এসেরীয় ও ক্যালডীয় সভ্যতার সমন্বয়ে বৃহৎ ভৌগোলিক সীমারেখাকে একই নামে চিহ্নিত করতে গিয়ে সভ্যতাটির নাম দেওয়া হয়েছে মেসোপটেমীয় সভ্যতা। তবে এখন মনে করা হয়, দুই নদীর মধ্যবর্তী অববাহিকাই কেবল নয়, আরও বড় একটা অঞ্চলজুড়ে একের পর এক সাম্রাজ্য ও নগর-রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল বর্তমান ইরাক, কুয়েতসহ দেশগুলোতে এই সভ্যতা বা নগর রাষ্ট্রগুলোর মিল ছিল তাদের লেখার রীতিতে আর ধর্মীয় মতবাদে, বিশেষ করে দেবতা ও দেবীদের উপরে অংশীদারত্বে। তাই মেসোপটেমীয় সভ্যতাকে কয়েকটি সভ্যতার মিলনও বলা যেতে পারে।
বিভিন্ন সময়ে একেকটি নগর একেকটি রাষ্ট্র হিসেবে কাজ করতো। নগরের প্রধান বা শাসকই ওই রাষ্ট্রেরও প্রধান ছিলেন। প্রতিটি নগরের কেন্দ্রে ছিল একটি মন্দির। একেকটি নগরের প্রধান দেবতার প্রতি নিবেদিত এই মন্দিরগুলোকে বলা হতো জিরাত। এই মন্দিরকে ঘিরেই পরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, দুর্গ, সাধারণ মানুষের বসবাসের স্থাপনাসহ আরও নানা ধরনের স্থাপত্য নির্মিত হতো। মেসোপটেমীয় সভ্যতার নগর-রাষ্ট্রগুলোতে ইতিহাসে ঘটা প্রথমবারের মতো ঘটনা ঘটেছিল। যেমন: প্রথম লিখিত আইনি দণ্ডবিধি, প্রথম আইন প্রণয়নকারী সভা ছিল, নারীদের প্রথম সমান অধিকার দেওয়া হয়েছিল বিবাহ বিচ্ছেদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ও ব্যবসায়িক চুক্তি করার, প্রথম চিকিৎসা বিধি রচিত হয়েছিল, প্রথম কৃষিকাজের বিবরণী, প্রথম সাহিত্যিক বিতর্ক, প্রথম পেশাগত চাকরির ধারণা ইত্যাদি।
এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপোটেমীয় সভ্যতা, আধুনিক ইরাক, ইরান, কুয়েত, তুরস্ক, সিরিয়া জুড়ে এই সভ্যতাগুলোর নগর ও বসতিগুলো গড়ে উঠেছিল। এ সভ্যতাগুলো উর্বর অর্ধচন্দ্রাকৃতি ভূমিতে; যে ভূখণ্ডের উত্তরে আর্মেনিয়ার পার্বত্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও পশ্চিমে আরব মরুভূমি এবং পূর্বে জাগরাস পার্বত্যাঞ্চল রয়েছে।
পার্বত্যাঞ্চল হলো পার্বত্য এলাকা। বৈশিষ্ট্যগতভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যথেষ্ট উচ্চতাসম্পন্ন, বন্ধুর এবং অতি সল্প পরিমাণের সমতল অথবা নিম্ন ঢাল বিশিষ্ট হয়ে থাকে। স্থানীয় বন্ধুরতা প্রায় ৬৫০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে, বিশ্বের প্রায় এক শতাংশ এলাকা নিম্ন ঢাল বিশিষ্ট পার্বত্য অঞ্চল এবং প্রায় ২৭ শতাংশ এলাকা পর্বতময়। |
এখানে যে লেখার রীতির প্রচলন ঘটেছিল সেই রীতি কিউনিফর্ম নামে পরিচিত। পাথরে, পোড়ামাটির খণ্ডে এসব লেখার প্রমাণ বিভিন্ন নগরগুলো খনন করে পাওয়া গেছে। এই লিখনশৈলীতে কবিতা ও মহাকাব্য (যেমন: গিলগামেশের মহাকাব্য) লিখিত হয়েছিল। অন্যান্য সমসাময়িক সভ্যতার মতনই এই সভ্যতা বিকশিত হওয়ারও প্রধান ভিত্তি ছিল দজলা ও ফোরাত নদীর উর্বর অববাহিকায় কৃষিকাজের বিকাশ এবং উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদন। পাশাপাশি, সমুদ্রপথে মিসরীয় সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র আর হরতা সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রের সঙ্গেও এই সভ্যতাগুলোর কেন্দ্রগুলোর স্থল ও সমুদ্রপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।
বিভিন্ন সভ্যতার সময়কাল
বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অধীনে মেসোপোটেমিয়ার অঞ্চলে বিভিন্ন সভ্যতা বিকশিত হয়েছিল। সেই সভ্যতাগুলোর নাম, সময়কাল আর প্রধান নগর রাষ্ট্রের নামে নিচের সারণিতে পাবে:
সময়কাল | জাতিগোষ্ঠী | আবাসস্থল | প্রধান নগর |
---|---|---|---|
খ্রি. পূ.৩২০০- খ্রি. পূ.২৩২০ | সুমের | উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এলামের পর্বতমালা | উর |
খ্রি. পূ.২৩২০- খ্রি. পূ. ২১৩০ | য়াক্কাদীয় | সুমেরের উত্তরে আব্বা অঞ্চলে (সেমেটিক ভাষী যাযাবর গোষ্ঠী) | আক্কাদ |
খ্রি. পূ.২১৩০- খ্রি. পূ. ২০০০ | সুমের | উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এলামের পর্বতমালা | উর |
খ্রি. পূ. ২০০০ | ইলামাইট | পূর্বাঞ্চলের উচ্চভূমি | উর |
খ্রি. পূ. ১৮০০- খ্রি. পূ. ১৬০০ | অ্যামোরাইট (সেমেটিক ভাষী যাযাবর গোষ্ঠী) | আরব মরুভূমি | ব্যাবিলন |
খ্রি. পূ.১৬০০- খ্রি. পূ. ১৩০০ | ক্যাসাইট ও হিটাইট | এশিয়া মাইনর ও আনাতোলিয়া | |
খ্রি. পূ.১৩০০- খ্রি. পূ.৬১২ | এসেরীয় | টাইগ্রিসের উচ্চ উপত্যকায় অবস্থিত ক্ষুদ্র মালভূমি | আসুর ও নিনেভ |
খ্রি. পূ.৬১২- খ্রি. পূ.৫৩৮ | ক্যালডীয় (সেমেটিক ভাষী যাযাবর গোষ্ঠী) | দক্ষিণ-পূর্বে পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল | আসুর ও নিনেভ |
মেসোপোটেমীয় সভ্যতার অগ্রদূত ছিল সুমেরীয় জাতি। তাদের সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র ছিল লাগাস, কিস, ইরিদু এবং উরুক। বিখ্যাত শাসক সারগন সুমেরের নগররাষ্ট্রগুলোকে একত্র করেন। পরবর্তীকালের অপর বিখ্যাত শাসক ছিলেন সম্রাট 'ভুক্তি'; যিনি সর্বপ্রথম একটি বিধিবদ্ধ আইন সংকলন করেছিলেন।
সামাজিক শ্রেণি ও বিশ্বাস
সুমেরীয়দের সমাজের প্রথম স্তরে ছিল শাসক ও ধর্মযাজক, দ্বিতীয় স্তরে সাধারণ নাগরিক এবং তৃতীয় স্তরে ক্রীতদাস সম্প্রদায়। তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল নাগাল। এ ছাড়া সূর্যদেবতা শামাশ, বৃষ্টি ও বায়ুর দেবতা এনলিল এবং নারী জাতির দেবী 'ইশতা' নামে পরিচিত ছিলেন।
সুমেরীয় সভ্যতার বিভিন্ন আবিষ্কার ও সৃষ্টি। প্রাক সাধারণ অম্ল ২০০০ এ সুমেরীয়রা গিলগামেশা নামক মহাকাব্যটি রচনা করেন। ৩০০০ প্রাক সাধারণ অব্দে সর্বপ্রথম সুমেরীয়রা কিউনিফর্ম নামক লিখন পদ্ধতির আবিষ্কার করেছিলেন। কাদামাটিতে চাপ দিয়ে চিত্রাঙ্কন করে মনোভাব প্রকাশ করা হতো। সুমেরীয়রাই প্রথম ডাকাচালিত যানবাহনের প্রচলন করেন। তাদের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যকীর্তি ছিল জিগগুরাত' নামের ধর্মমন্দির।
বাবিলনীয় সভ্যতা গড়ে তুলেছিল অ্যামোরাইট নামের সেমিটিক জাতি। বাবিলন এ সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী নগরে পরিণত হয়েছিল। সেমেটিক জাতির বিখ্যাত সম্রাট হাম্মুরাবি পৃথিবীর প্রথম আইনপ্রণেতা হিসেবে বিবেচিত। বর্তমানে ফ্রান্সের লুভার জাদুঘরে সংরক্ষিত একটি স্তম্ভে ২৮২টি আইন উৎকীর্ণ করা আছে। ব্যবিলনীয় সভ্যতায় 'মারদুর' নামের সূর্যদেবতার পূজা অনেক বেশি জনপ্রিয় ছিল। এছাড়া প্রণয়ের দেবী ইশতার, বায়ুর দেবতা মারুওসসহ অসংখ্য দেবদেবীর পূজা তারা করতেন। তারাই মাসকে ৩০ দিনে, সপ্তাহকে ৭ দিন ও দিনকে ২৪ ঘণ্টায় ভাগ করেন। বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, গণিত ও শিল্পকলায় যথেষ্ট অবদান রেখেছেন।
হাম্মুরাবির মৃত্যুর পর সেমেটিক জাতি আসুর ও নিনেভে বসবাস শুরু করার ফলে নগর দুটি প্রধান নগরে পরিণত হয়। এরাই সময়ের পরিক্রমায় এসেরীয় নামে পরিচিতি লাভ করে।
এসেরীয় সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রাজা তৃতীয় ভিগলাথপিনবার প্রথম প্রাদেশিক শাসন প্রবর্তন করেন। সেনাচেরির সময়ে সমগ্র উর্বর চন্দ্রাকৃতি তুমি বিজিত হয় এবং তিনি নিনেভকে এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত করেন। তবে মিসর অভিযানে তিনি ব্যর্থ হলেও তার পৌত্র আসুরবানিপাল মিসর দখল করেন। আসুরবানিপাল এশিয়ার প্রথম গ্রন্থাগারটি নিনেভে প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ২২০০০টির বেশি কাদামাটির চাকতির পুস্তক ছিল।
প্রাক সাধারণ অব্দ ৬১২ অব্দে এসেরীয়দের পতন ঘটলে নেবোপালসারের নেতৃত্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত নারী ব্যাবিলনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ও সভ্যতা গড়ে ওঠে, যেটি ক্যালডীয় বা নবা ব্যাবলনীয় সভ্যতা নামে পরিচিত। হাম্মুরাবির পর নিকট প্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজা ছিলেন নেবো পালসারের পুত্র নেবুচাদনেজার। ব্যাবিলন শহরে ১০০ ফুট উঁচু ৫৬ মাইল দেয়াল এবং শহরের মধ্যবর্তী স্থানে দেবী ইশতারের স্মরণে ইশতার তোরণ ও সঙ্গে মিছিল সড়ক নির্মিত হয়েছিল। দেবতা মারদুকের নামে উৎসর্গকৃত জিগগুরাত মন্দিরটি তার উচ্চতার কারণে 'টাওয়ার অব ব্যাবেল' নামে পরিচিত। নেবুচাদনেজার তার রানীর সন্তুষ্টির জন্য নগর দেয়ালের উপর ঝুলন্ত উদ্যান' নামে অভিহিত একটি উদ্যান নির্মাণ করেন। এই অপূর্ব কীর্তি পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্য নামে খ্যাত। পৃথিবীর ইতিহাসের মেসোপোটেমিয়া সভ্যতার পরবর্তী প্রায় সকল সভ্যতাই শিক্ষা, সাহিত্য চর্চা, জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চা, শিল্পকলা ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে এর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রবাহিত হয়েছিল। তাই বিশ্বসভ্যতায় তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
সভ্যতাগুলোর সমাজ, রাজনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা
লিখিত বিভিন্ন সূত্র থাকায় এখানকার রাষ্ট্র, সমাজ, মানুষজন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। অনেক সময় নগরগুলো সার্বভৌম ছিল। লিখিত আইন ও দণ্ডবিধি প্রণীত হতো প্রধান শাসক ও প্রধান মন্দিরের পুরোহিতসহ বিভিন্ন মানুষের একটি সমষ্টির মাধ্যমে। আইনের ক্ষেত্রে সাবালক ও নাবালকের ভেদ ছিল। তবে রাজার ভূমিকাই মুখ্য ছিল। বিভিন্ন ধরনের পেশায় নাগরিকগণ যুক্ত ছিলেন। সমাজে উচ্চনীচ ভেদাভেদ আর নানা ধরনের পেশার মানুষজনের উপস্থিতির কারণে ভেদাভেদ ও বৈষম্য অন্যান্য সভ্যতার নগর ও বসতির মানুষজনের মতনই ছিল। প্রথম দিকে পুরোহিতগণের প্রাধান্য শাসনের ক্ষেত্রে থাকলেও পরে রাজা বা প্ৰধান শাসক সবচেয়ে ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। মেসোপটেমীয়াতেই প্রথম রথ বা ঘোড়া চালিত চাকার বাহনের প্রমাণ মেলে। কৃষিকাজ ও আবাদ করা প্রধান পেশা হলেও কারিগর, পুরোহিত, শিক্ষক, চিকিৎসক, চর্মকার ইত্যাদি পেশা ছিল।
নিচের ডায়াগ্রামটি ব্যবহার করে গ্রীক মেসোপটেমীয় সভ্যতার মূল সাতটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে লেখার চেষ্টা করি:
বিতর্ক: “মিসরীয় সভতা মেসোপোটেমীয় সভ্যতার চেয়ে বেশি অগ্রগামী ছিল দুটি দলে বিভক্ত হয়ে এর পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরি। বন্ধুরা আর খুশি আপা হবেন বিচারক। এর পক্ষে আর বিপক্ষে যুক্তি গুলো পয়েন্ট আকারে লিখে রাখিঃ
পক্ষে যুক্তি | বিপক্ষে যুক্তি |
---|---|
|
গুরুত্বপূর্ণ ও মজার তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তৈরি:
মেসোপোটেমিয়া সভ্যতার কত গুরুত্বপূর্ণ আর মজার মজার বিষয় আমরা পড়লাম। এবারে আমরা এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতার প্রতিটির জন্য পাঁচটি করে প্রশ্ন তৈরি করি, যে প্রশ্নের উত্তর এক শব্দে বা এক কথায় দেওয়া যায়। উত্তরগুলোও চিহ্নিত করি আর লিখে রাখি। তোমার পাশের বন্ধুও নিশ্চয়ই এ রকম কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছে। দুজন দুইজনের তৈরি করা প্রশ্নের উত্তরগুলো দেওয়ার চেষ্টা করি। দেখি তা কে কয়টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারি। ভুল হলে বই দেখে নেই বন্ধুর সঙ্গে মিলে।
গ্রিসের মহাকবি হোমার রচিত 'ইলিয়ন' ও 'ওডিসি' মহাকাব্যের উল্লিখিত চমকপ্রদ কাহিনির সূত্র ধরে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ট্রয় নগরীসহ ১০০ নগরীর ধ্বংসস্তূপের সন্ধান পান। ক্রিট দ্বীপের মিনীয় ও গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে দক্ষিণ অঞ্চলের মাইসেনীয় সভ্যতা; এ দুটি সভ্যতাকে একত্রে ইজিয়ান সভ্যতা বলা হয়। এই ইজিয়ান সভ্যতার উন্নয়নের ফল হিসেবে গ্রিস সভ্যতার বিকাশ ঘটে। যে কারণে ইজিয়ান সভ্যতার অপর নাম প্রাক্-ক্লাসিক্যাল বা আদি গ্রিক সভ্যতা গ্রিকসভ্যতা। অন্যান্য সকল সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক হলেও গ্রিক সভ্যতায় সাগরের অবদান লক্ষ করা যায়।
প্রাচীন গ্রিসের প্রধান ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হলো পর্বত, সমুদ্রবেষ্টিত দ্বীপমালা।
মূলত গ্রিস সভ্যতা ছিল অনেকগুলো দ্বীপরাষ্ট্রর সমন্বয়। এই দ্বীপরাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন সময়
পর্বত পর্বত বলতে আমরা ভূপৃষ্ঠের এমন একটি অবস্থানকে বুঝি যার উচ্চতা অধিক এবং যা খাড়া ঢালবিশিষ্ট। সাধারণত ১০০০ মিটারের অধিক উচ্চতার বিশিষ্ট ভূমিরূপগুলোকে পর্বত বলে। পর্বতের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার মিটার হতে পারে। যেমন কিলিমানজারো ও হিমালয় পর্বতমালা। কীভাবে পর্বতমালা গঠিত হয়? কিছু পর্বত আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ দ্বারা গঠিত হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, বেশির ভাগ আগ্নেয়গিরির পর্বতগুলো পৃথিবীর গভীরে গলে যাওয়া শিলা দিয়ে তৈরি। পাথরটি পৃথিবীর পৃষ্ঠ বা ভূত্বকের মধ্য দিয়ে উঠেছিল। তারপর এটি লাভা আকারে পৃষ্ঠের উপর প্রবাহিত হয়। লাভা ও আগ্নেয়গিরির ধূলিকণা মিলে পর্বত গঠিত হয়। আগ্নেয়গিরির পর্বতগুলো সাধারণত খাড়া এবং মোচার মতো আকৃতির হয়। জাপানের মাউন্ট ফুজি, আফ্রিকার মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট রেইনিয়র আগ্নেয় পর্বতের উদাহরণ। অন্য পর্বতগুলো পৃথিবীর পৃষ্ঠ বা ভূত্বকের মধ্যে চলাচলের দ্বারা গঠিত হয়েছিল। প্লেট টেকটোনিক্স নামে একটি তত্ত্ব আছে যা বিশদভাবে তোমরা পরের শ্রেণিতে জানবে, এই তত্ত্ব এই ধরনের পর্বতে গঠন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে। সংক্ষেপে যদি বলা হয়, তাহলে পৃথিবীর পৃষ্ঠটি অনেকগুলো প্লেট নামক বিশাল অংশে বিভক্ত, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা গণিত শিলার উপরে ভেসে থাকে এবং খুব ধীরে ধীরে চলে। মহাদেশগুলো প্লেটের উপরের অংশে থাকে এবং সেগুলোর সঙ্গে চলে। অনেক সময় প্লেটগুলোর সংঘর্ষ- হয়, তখন ভূপৃষ্ঠ উপরের দিকে উঠে যায়, আর এই উঁচু হয়ে যাওয়া অংশকে আমরা বলি পর্বত। এশিয়ার হিমালয় এই ধরনের পর্বতের উদাহরণ। ভারত বহনকারী একটি প্লেট এর সঙ্গে এশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষে এগুলো তৈরি হয়েছিল। |
সংঘাতে যেমন লিপ্ত হয়েছে, তেমনি আবার সংঘবদ্ধ হয়েও নানা কাজ করেছে। যে কারণে এ সভ্যতায় ছোট ছোট নগররাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল। গ্রিসের তিন দিক অ্যাড্রিয়াটিক, ভূমধ্যসাগর ও ইজিয়ান সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এখানে নদীগুলো খালের মতো অপ্রশস্ত, অগভীর এ অনাব্য, যে জন্য এখানকার ভূমি উর্বর ছিল না। এ কারণে গ্রিসে গড়ে ওঠা সভ্যতা নদীকেন্দ্রিক না হয়ে সাগরকেন্দ্রিক সভ্যতা হিসেবে বিকশিত হয়েছে।
আনুমানিক ১৩০০ থেকে ১২০০ প্রাক সাধারণ অব্দ থেকে সূচিত হয়ে প্রাক সাধারণ অন্দ ষষ্ঠ ও পঞ্চম শতকে গ্রিক সভ্যতার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। পর্বতময় প্রিস দ্বীপরাষ্ট্রের প্রধান শহর ছিল এফেন্স। সেখানেই প্রথম গণতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল। প্রাচীন গ্রিসের ছোট নগর রাষ্ট্রগুলোকে বলা হতো পলিস। পেলোপনেসাসের স্পার্টা নগররাষ্ট্রটি সমরতন্ত্র ধারা বা যুদ্ধকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেবার নীতি প্রভাবিত ছিল। গ্রিক নগররাষ্ট্রের দুর্গ সুরক্ষিত অঞ্চলকে বলা হতো অ্যাক্রোপলিস। আর কর্মচঞ্চল এলাকাকে বলা হতো অ্যাগোরা।
সামাজিক অবস্থা
গ্রিক সমাজ ছিল শ্রেণি বিভক্ত সমাজের উচ্চতর স্তরে ছিল অভিজাত শ্রেণি এবং অপর শোষিত ও নির্যাতিত শ্রেণি ছিল দাস ও শ্রমিকগন। অভিজাতগণ ছিল অগাধ সম্পত্তির মালিক ও প্রশাসনের বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত। ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও তারা ছিল সবচেয়ে সুবিধাবাদী। গ্রিক সমাজে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ছিল বণিক গোষ্ঠী।। হেলেনিস্টিক যুগ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ হলেও তা কেবল শাসক ও বণিকসহ অভিজাত শ্রেণি ভোগ করেছে। অপর দিকে কায়িক শ্রমের কাজগুলো করেছে ক্রীতদাসেরা।
প্রাচীন গ্রিকদের ঘরবাড়ি কেমন ছিল?
গ্রিকদের ঘরবাড়িগুলো একটি বড় উঠানকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছিল। এই উঠানই ছিল তাদের নানান কার্যা কলাপের কেন্দ্রবিন্দু। সাধারণত উঠানে জল সরবরাহের একটি কূপ, দেবতাদের উপাসনা করার জন্য একটি বেদি, বাচ্চাদের খেলাধুলার উপযোগী একটি জায়গা ছিল। উঠানের চারপাশে থাকা ঘরগুলো ছিল কাজের ঘর, স্টোররুম, শয়নকক্ষ ইত্যাদি। অধিকাংশ বাড়িতে 'অ্যাড্রন' নামে একটি ঘর ছিল, যেখানে বাড়ির পুরুষেরা আড্ডা দিতো এবং তাদের বন্ধু ও ব্যবসায়িক সহযোগীদের সময় দিতো।
কৃষি ও বাণিজ্য
কৃষি ও বাণিজ্য ছিল গ্রিক অর্থনীতির মূলভিত্তি। অধিকাংশ ভূমি পার্বত্যময় ও অনুর্বর হওয়ায় খাদ্যশস্য বাইরে থেকে আমদানি করা হতো। সাধারণভাবে কৃষক ছিলেন দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত। গম ও যব ছিল প্রধান কৃষিপণ্য। গ্রিসের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছিল অভিজাত ও বণিকদের হাতে।
ধর্মীয় বিশ্বাস
প্রাচীন গ্রিকরা ছিলেন মূলত প্রকৃতি পূজারি ও বিভিন্ন দেব-দেবীতে বিশ্বাসী। গ্রিসবাসীদের প্রধান দেবতা ছিলেন জিউস। তবে তাদের প্রতিটি নগর ও অঞ্চলের নিজস্ব দেবতা ছিল। জিউস কখনো আকাশের দেবতা, আবার কখনো বস্ত্র ও বৃষ্টির দেবতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যুদ্ধের দেবতা ছিলেন আরাস। সূর্যদেবতা ছিলেন। অ্যাপোলো, পসিডন ছিলেন সমুদ্রের দেবতা। জ্ঞান ও বায়ুর দেবী ছিলেন চিরকুমারী এথেনা।
স্থাপত্য
জ্ঞানের দেবী এখেনার উদ্দেশে হেলেনেস্টিক সময়ে বিখ্যাত পার্থেনন মন্দির নির্মিত হয়। গ্রিক সভ্যতায় হেলেনীয় যুগে স্থাপত্য ও ভাস্কর্য শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছিল। গ্রিসের সবচেয়ে খ্যাতিমান ভাস্কর ফিদিয়াসের ৭০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট দেবী এথিনার মূর্তি ইতিহাসের দুর্লভ সংযোজন। এথেন্সের এক্সোপলিসে গ্রিক সভ্যতার সুন্দর নিদর্শনের ভগ্নাবশেষ ও বড় বড় স্তম্ভযুক্ত প্রাসাদ যে কারও চিত্ত আকর্ষণ করে। ডোরীয়, আয়োনীয় ও কোরেশীয় রীতির স্তম্ভ বর্তমানেও অনুসরণ করা হয়।
দর্শন, খেলাধুলা ও সাহিত্য চর্চা
জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, খেলাধুলা, সাহিত্য চর্চা প্রভৃতি ক্ষেত্রে গ্রিকদের বিশাল অবদান রয়েছে। ইতিহাসের জনক খ্যাত হেরোডটাস গ্রিস ও পারস্যের যুদ্ধ নিয়ে ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রথম বই রচনা করেন। গ্রিক সভ্যতায় খেলেস, সক্রেটিস, প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের মতো খ্যাতিমান দার্শনিক ছিলেন। বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিপোক্রেটেসেরও চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ৭৭৬ প্রাক সাধারণ অব্দে সর্বপ্রথম গ্রিকদের দ্বারা অলিম্পিক গেমস খেলা শুরু হয়। আর তারাই প্রথম পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করে। গ্রিক সভ্যতা শুধু ইউরোপকে নয় পুরো পৃথিবীকে আলোর পথে অগ্রসর করে দেয়।
গ্রিস সভ্যতায় প্রাচীন গ্রিসের দেবতা ও দেবীদের নিয়ে অনেক গল্প ও কাহিনি লেখা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ধরনের চিত্র আঁকা হয়েছে। মহাকবি হোমার লিখিত ইলিয়াড ও অভিসি নামের মহাকাব্যে এই দেব-দেবীরা মানুষের সঙ্গে নানা ঘটনা ও যুদ্ধে সম্পর্কিত থাকেন। তোমরা বড় হয়ে ওই সময়ের গ্রিক দেবতা ও দেবীদের নিয়ে তৈরি করা অনেক সিনেমাও দেখতে পারবে। গ্রিকদের পুরাণকথা অনুসারে স্বর্গের অলিম্পাস পর্বতে বারোজন দেবতা ও দেবী থাকেন। তারা হলেন, আকাশ, বজ্রপাত, আইন ও বিচারের দেবতা ও দেবতাদের
রোমান সভ্যতা ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী ও জাঁকজমকপূর্ণ একটি সভ্যতা ছিল। আর রোমান সাম্রাজ্য ১০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শাসনক্ষমতা ধরে রেখে তার অঞ্চল শাসন করেছিল। ঐতিহাসিকদের মতে, ৭৫৩ প্রাক সাধারণ অব্দে নির্বাসিত দুই রাজপুত্র রোমিউলাস ও রেমাস সিংহাসন পুনরাধিকার করে যে নগরী নির্মাণ করেন, রোমিউলাসের নামানুসারেই নগরীর নামকরণ করা হয় রোম।
ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণাংশের ইতালিতে টাইবার নদীর তীরে রোম নগরীর পত্তন ঘটে। ইতালি ভূখণ্ডের মাঝামাঝি পশ্চিমাংশে রোম নগরের অবস্থান। টাইবার ইতালির দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী, এপেনীয় পর্বতশ্রেণি থেকে শুরু হয়ে টাইরেনিয়ান (Tyrrhenian) সাগরে মিলিত হয়েছে। ইতালির তিন দিকে সাগর। উত্তরে আল্পস পর্বতমালা, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে অ্যাড্রিয়াটিক এবং পশ্চিমে ইউকান সাগর রয়েছে।
রোমের শাসকেরা সামরিক শক্তির সাহায্যে তাদের কর্তৃক ইতালির অন্যান্য অঞ্চলে বিস্তারের নীতি গ্রহণ করেন। আর রোমান রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন স্বয়ং সম্রাট। তার পরেই ক্ষমতার অধিকারী
ছিল সিনেট। প্রাক সাধারণ অম্ল ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজতন্ত্র উৎখাত করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। রাজতন্ত্র অবসানের আগেই রোমের জনগণ প্যাট্রসিয়ান এবং প্রেরিয়ান এ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। প্যাট্রসিয়ান অর্থাৎ অভিজাত শ্রেণি, প্লেবিয়ান রোমের সাধারণ নাগরিক। রোমে প্রজাতন্ত্রের স্থায়িত্বকাল ছিল প্রায় ৫০০ বছর, আর রাজতন্ত্র বিরাজমান ছিল পরবর্তী ১ হাজার ৫০০ বছর।
সমাজ ও অর্থনীতি
রোম নগরীর পত্তনের পর থেকেই ক্রমশ লোকজনের বসতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। সাধারণভাবে রোমানরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে একক ও ঐক্যবদ্ধ একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সফল হয়েছিল। সে কারণে তাদের জীবনযাপন প্রণালি ব্রিটেন থেকে মিসর এবং স্পেন থেকে রোমানিয়া পর্যন্ত সকলেই গ্রহণ করেছিল। প্রথম এবং দ্বিতীয় সাধারণ অব্দে যখন রোমান সাম্রাজ্যের সম্প্রসারণ হচ্ছিল, তখনকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনসম্পর্কিত নানা তথ্য পাওয়া যায়। এ সময় বাণিজ্য ও উৎপাদন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন করেছিল। বাণিজ্য প্রধানত সাম্রাজ্যের গণ্ডিতে পরিচালিত হতো, কিন্তু সিঙ্ক রোড এবং ভারত, আফ্রিকা এমনকি চীন পর্যন্ত এটি প্রসারিত হয়েছিল।
কৃষি
সভ্যতা গড়ে ওঠার জন্য রোম একটি উপযুক্ত স্থান ছিল। টাইবার নদী প্রাচীন রোমে কৃষি বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছিল, যে কারণে এটি কৃষিনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে ওঠে। টাইবার নদীটি রোমকে মিঠাপানি ও উর্বর মাটির যোগান দিয়েছিল। তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফসল ছিল আঙ্গুর, জলপাই ও খাদ্যশস্য। কারণ, আঙ্গুর থেকে মদ এবং জলপাই থেকে তেল উৎপাদন করা হতো। দুধ, মাংস ও পনিরের চাহিদা পূরণের জন্য গরু, ভেড়া ও ছাগল পালন করত।
স্থাপত্য
স্থাপত্যের ক্ষেত্রে রোমান সভ্যতার উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। প্রাচীন রোমের স্থাপত্যের এমন বৈশিষ্ট্য ছিল যা এর আগে ছিল না। খিলান, ভল্ট ও গম্বুজের ব্যবহার তাদের স্থাপতো অনেক বেশি সার্থক হয়ে উঠেছে। সম্রাট হাইড্রিয়ানের তৈরি ধর্মমন্দির 'প্যাস্থিয়ন' রোমের অন্যতম বৃহৎ স্থাপত্যিক নিদর্শন। রোমেই তৈরি হয়েছে 'কলোসিয়াম' নামে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাট্যশালা, যেখানে ৫৬০০ দর্শক বসতে পারে। রোম শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি আয়তাকার ফোরাম বা প্লাজা যার চারদিকে প্রাচীন রোমের অনেক স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এই কাঠামোটি রোমান জনজীবনের বিভিন্ন দিককে একত্রিত করেছিল। রোমান প্রজাতন্ত্রের যুগে এই স্থানে গণসমাবেশ, সালিশ, গ্লাডিয়েটরদের যুদ্ধ ইত্যাদি হতো এবং এখানে তখন প্রচুর দোকান ও খোলা বাজার ছিল। রোম সাম্রাজ্যে রূপান্তরিত হওয়ার পর যখন ধর্ম ও ধর্মনিরপেক্ষ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হয়ে ওঠে, তখন এখানে বেশ কিছু মন্দির ও সৌধ নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া রোমানরা শহরের বিভিন্ন কেন্দ্রে পানি সরবরাহের জন্য খিলানযুক্ত কৃত্রিম নালা তৈরি করে, যাকে বলা হয় অ্যাকুইডাক্ট। রোমান সাম্রাজ্য জুড়ে সুউচ্চ প্রায়। ২৬০ মাইল অ্যাকুইডাক্ট ছিল। রোমান স্থাপত্যের অন্যতম আরেকটি নিদর্শন ছিল গোসলখানা বা বাথ স্পা। কিন্তু এটি রোমানদের শুধু গোসলখানা হিসেবে নয়, বরং আড্ডা দেওয়া ও গল্প করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। রোমানদের তৈরি এঞ্জিয়ান রাস্তাটি এখন পর্যন্তও দৃশ্যমান রয়েছে। এগুলোতে ব্যবহৃত নকশা এতোই অনন্য ছিল যে এর শৈলীকে আমরা আজও রোমানে (Romanesque) হিসেবে অভিহিত করি। বেশির ভাগ ভবন পাথর, কাঠ ও মারবেল দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। রোমের মারবেলের সবচেয়ে কাছের উৎস ছিল তুষ্কানি (Tuscany)
শিল্পকলা
রোমান শিল্পের সবচেয়ে জনপ্রিয় কাজ ছিল চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য ও মোজাইকের কাজ। ভাস্কর্য এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম ধাতু, রত্ন পাথর, হাতির দাঁত ও কাচ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। রোমান ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে চরম সাফল্য হচ্ছে পূর্ণাবয়ব এবং আবক্ষ মূর্তি দ্বারা মনুষ্য প্রতিকৃতি নির্মাণ। রোমান শিল্প গ্রিকদের দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়েছিল। রোমান চিত্রকর্মের বিষয়বস্তু হলো প্রাণী, স্থির জীবন, প্রাত্যহিক জীবনের কর্মকাণ্ড, মিথোলজি ইত্যাদি।
রোমান ধর্ম
প্রাচীন রোমের ধর্ম ছিল প্যারিস্টিক অর্থাৎ একাধিক ঈশ্বরে তারা বিশ্বাস করতো। তবে তাদের প্রধান দেবতার নাম ছিল জুপিটার যিনি ছিলেন আকাশের দেবতা। প্রকৃতপক্ষে রোমানরা বহু দেব-দেবীর উপর বিশ্বাস করলেও তাদের মধ্যে অন্যতম ১২ জন দেবতাকেই বিশ্বাস করতেন। এরা হলেন জুপিটার, জুনো, স্যাটার্ন, নেপচুন, প্লুটো, মার্চ, ভেনাস, মার্কারি, অ্যাপোলো, ডায়ানা, মিনার্ভা ও সেরেস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব বিস্তার করলে চতুর্থ সাধারণ অব্দে রোমান সম্রাট কন্সটানটাইন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং এটি রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা লাভ করে।
আইন
বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে রোমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে আইন প্রণয়ন। প্রাক সাধারণ ৪৫০ অব্দে ১২টি ব্রোঞ্জপাতে আইনগুলো খোদাই করে জনগণের জন্য প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এই লিখিত আইনকে 'হেবিয়াস কর্পাস' বলে। রোমান আইনের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান। রোমানদের আইনকে আধুনিক পাশ্চাত্য আইনের ভিত্তি বলা হয়।
দর্শন ও সাহিত্য
দর্শন ও সাহিত্য চর্চায়ও রোম পিছিয়ে নেই। রোমান যুগের প্রখ্যাত নাট্যকার প্লুটাক ১২টি নাটক লেখেন, যেগুলোতে তিন শতকে রোমের আচার-আচরণ ও সংস্কৃতি প্রতিফলিত হয়েছে। রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত দার্শনিক মতবাদের নাম 'স্টোয়িকবাদ'। এ মতবাদের দার্শনিকেরা মনে করেন, সুখ লাভ করার জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং সত্যবাদী হওয়
রোমান সভ্যতার পতন
রোমে বসবাসকারী আদি অধিবাসীদের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের সংঘর্ষ একটি সাধারণ বিষয় ছিল। নানা উত্থান-পতন, ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ৪৭৬ সাধারণ অপে জার্মান বর্বর জাতিগুলোর হাতে রোমান সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন ঘটেছিল।
রোমের প্যাথিয়ন মন্দির প্রথম দিকে দেখতে কেমন ছিল? শিল্পীর কল্পনায়। প্যাথিয়ন নির্মাণ করার পরে এই স্থাপত্য মন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে এই মন্দিরকে গির্জায় রূপান্তরিত করা হয়। এই স্থাপনার উপরে যে গম্বুজটি দেখতে পাচ্ছ সেটা আধুনিক কালের আগে সবচেয়ে বড় গম্বুজ ছিল।
রোমান সভ্যতা ও সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান প্রতীক হিসেবে যে স্থাপত্যটিকে আধুনিককালে বিবেচনা করা হয় সেটা হলো কলোসিয়াম। কলোসিয়াম হলো একটি গ্যালারি ঘেরা খোলা অঙ্গন। গ্যালারি কয়েকতলা বিশিষ্ট। এই ধরনের স্থাপনাকে অ্যাম্ফিথিয়েটার বলা হয়। তবে কলোসিয়ামের স্থাপতা আরও বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট। নিচে রোমান কলোসিয়ামের জন্ম বর্তমান অবস্থা আর সেটা কেমন ছিল তা দেওয়া হয়েছে। এই স্থাপনা রোমান সম্রাটদের নির্দেশে নির্মাণ করা হলেও এটা নির্মাণে প্রায় এক লক্ষ ক্রীতদাস কাজ করেছিলেন। এই কলোসিয়াম তৈরি হয়েছিল রোমানদের বিনোদনের জন্য। দাসদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের যুদ্ধ বা দ্বন্দ্বযুদ্ধ, অথবা একজন দাসের সঙ্গে বাঘ বা সিংহের মতন হিংস্র প্রাণীর প্রাণঘাতি লড়াই দেখার জন্য এখানে রোমের মানুষজন জড়ো হতেন। অসংখ্য দাস এই বিনোদনে মৃত্যুবরণ করেন। এদেরই মধ্যে একজন দাস এই অন্যায় বিনোদনের বিরুদ্ধে আর নিজেদের স্বাধীনতার জন্য দাসবিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন। তার নাম ছিল স্পার্টাকাস।
রোমান ও গ্রিক সভ্যতার মিল ও অমিল খুঁজে বের করি।
মিল | অমিল |
---|---|
|
খেলা: এক পা করে সভ্যতাকে এগিয়ে নেওয়া এই খেলাটি আমরা শ্রেণিকক্ষের বারান্দায়, মাঠে বা অন্য কোনো খোলা জায়গায় খেলতে পারি। আমরা প্রত্যেকে সাতটি দলে ভাগ হই। লটারি করে একটি সভ্যতা নির্বাচন করি। এবারে প্রতিটি দলের একজন করে প্রতিনিধি এক লাইন বরাবর পাশাপাশি দাঁড়াই। প্রত্যেকে তারা যে সভ্যতাটি লটারিতে পেয়েছে সেটি বড় করে লিখে হাতে নিয়ে দাঁড়াই। শিক্ষক খুশি আপা বা অন্য দলের সদস্যরা প্রতিটি দলকে সেই সভ্যতাসংক্রান্ত একটি প্রশ্ন করবে, যেটির উত্তর একটি শব্দে দেওয়া যায়। দলের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রতিনিধি উত্তর দেবে। উত্তর সঠিক হলে তারা এক পা এগোবে। ভুল হলে সেই জায়গায়ই থাকবে। এভাবে প্রতিটি দলকে প্রশ্ন করা হবে ১০টি। দেখিতো কোন সভ্যতা সবচেয়ে এগিয়ে যেতে পারে? |
নিচের ডায়াগ্রামটি ব্যবহার করে রোমান সভ্যতার মূল সাতটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লেখার চেষ্টা করি:
কাগজের উড়োজাহাজে সভ্যতার নিদর্শন। তোমরা একটি কাগজে কোনো একটি সভ্যতাসংক্রান্ত একটি তথ্য বা ছবি বা কোনো ঘটনা একে বা লিখে তা দিয়ে একটি কাগজের উড়োজাহাজ বানাও। বন্ধুদেরও বলো তাই করতে। এবারে সবাই একেকজনের দিকে ছুড়ে দাও সেই উড়োজাহাজ। আর প্রত্যেকেই বন্ধুদের ছোড়া যেকোনো একটি উড়োজাহাজ ধরার চেষ্টা করো। কাগজটি খুলে পড়ো। দেখো তো এটি কোন সভ্যতাকে নির্দেশ করে? সেটা কাগজটিতে লেখো। এবারে এগুলো দেয়ালে আটকাই সবাই। একে অন্যেরটা দেখি, ভুল থাকলে শুধরে নিই। |
সময় রেখা তৈরি : আমরা তো বেশ কিছু সভ্যতা সম্পর্কে জানলাম। এগুলো একেক সময়ে গড়ে উঠেছে। এবারে এসো আমরা সবচেয়ে আগের সভ্যতা থেকে শুরু করে পর পর সময় অনুযায়ী সভ্যতাগুলো সাজাই। সঙ্গে প্রতিটি সভ্যতা কোন এলাকায় গড়ে উঠেছে তা-ও উল্লেখ করব: পরবর্তী সময়ে নতুন কোনো সভ্যতা সম্পর্কে পরিচিত হলে সেটিও যোগ করে দিও এই সময় রেখায়। তোমরা শ্রেণিকক্ষে ছোট ছোট কাগজ কেটে এ রকম কিছু বানিয়ে দেয়ালজুরে লাগাতে পারো। |
প্রথম ঘটা ঘটনাগুলো তুলে ধরি। বিভিন্ন সভ্যতার সময়কালে বিভিন্ন স্থানে প্রথম কিছু আবিষ্কার হওয়া বা ঘটনা ঘটার কথা পড়েছ তোমরা। চলো সেগুলো খুঁজে বের করি: |
প্রথম | নাম | সভ্যতা | স্থান | সময় |
---|---|---|---|---|
কাগজ | প্যাপিরাস | মিশরীয় | মিশর | |
প্রথমে এগুলো ছোট ছোট কাগজে লিখি। এরপর এগুলো সময়ের ক্রম অনুযায়ী পর পর সাজাই। বোঝার চেষ্টা করি কোন আবিষ্কারের পর কোনটি ঘটেছে? একই সময়ে কী কী নতুন আবিষ্কার হয়েছে? একই স্থানে কী কী আবিষ্কার হয়েছে?